নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্বাজারের চকরিয়ায় তিন বছর মেয়াদে সরকারি জলমহাল ইজারায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি জলমহাল সর্বোচ্চ ডাককারীকে নিলাম না দিয়ে কম মূল্যে ডাককারী কথিত মৎস্যজীবী সমিতিকে ইজারা প্রদান করায় বঞ্চিত হয়েছেন সরকারের তালিকাভুক্ত (এফআইডি সার্টিফিকেটধারী) প্রকৃত মৎস্যজীবীরা। এ নিয়ে তাদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাই সর্বোচ্চ ডাককারীকে জলমহাল ইজারা প্রদানের দাবি তুলেছেন। এই ঘটনায় প্রকৃত মৎস্যজীবীদের সংগঠন লক্ষ্যারচর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আশরাফ আলী বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘গত ১০ মার্চ পূর্ব বড় ভেওলার ১ দশমিক ৫৮ একরের জলমহালটি ইজারা পেতে দরপত্রে অংশগ্রহণ করে ওই সমিতি। যার অনলাইন আবেদন ক্রমিক হচ্ছে ২০৫৮। তারা সর্বোচ্চ ৪ লক্ষ ২১ টাকায় সর্বোচ্চ ডাককারী হন। এ ছাড়া সমিতির অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক সদস্য সরকারের তালিকাভুক্ত (এফআইডি) মৎস্যজীবী। পক্ষান্তরে লাখ টাকা কম মূল্যে ডাককারী ছিল মাইজপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। এই সমিতির সদস্যরা সরকারি তালিকাভুক্ত মৎস্যজীবী নয়। এমনকি মাইজপাড়া মৎস্যজীবী সমিতির কেউ মৎস্যচাষও করেন না এবং ওই সমিতির অস্তিত্বও নেই।’ আশরাফ আলীর অভিযোগ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে এই অনিয়ম করা হয়েছে। অনিয়ম প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার অফিস সহকারী অনিল বড়ুয়া বলেন, ‘এই ধরনের তথ্য আমার জানা নেই। সেটি বড় সাহেবরা ভাল বলতে পারবেন।’
এসি ল্যান্ড অফিস সূত্র জানায়, উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন চকরিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে তিন বছর মেয়াদী ইজারাযোগ্য সরকারি জলমহাল রয়েছে ৪৯টি। তন্মধ্যে চলতি বছর জলমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে ৯টি। সেখানে আরো কয়েকটি সহ ইজারা প্রদানে অনিয়ম করা হয়েছে পূর্ব বড় ভেওলার ১ দশমিক ৫৮ একরের জলমহালটিও।
সর্বোচ্চ ডাককারীকে ইজারা না দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ-জামান। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৯ এর ৪ (চ) ধারা মোতাবেক পূর্ব বড় ভেওলা মাইজপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে পূর্ব বড় ভেওলার পুকুরটি ইজারা প্রদান করা হয়। যদিওবা ওই সমিতির কোনো সদস্য সরকারি মৎস্যজীবী তালিকাভুক্ত নয়। এমনকি অস্থিত্বহীন এই সমিতির কোনো সদস্য মৎস্য চাষের সাথে সম্পৃক্তও নন বলে আগে থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল। এর পরেও তা আমলে না নিয়ে দেওয়া হয়েছে ইজারা।
এই প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ-জামান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৯ এর ৪ (চ) ধারা মোতাবেক পূর্ব বড় ভেওলার পুকুরটি তিনবছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। যে সমিতি ইজারা পেয়েছে সেটা স্থানীয় হিসেবে অগ্রাধিকার পেয়েছে। তবে ওই সমিতির সদস্যরা যদি সরকারের এফআইডিভুক্ত না হয় এবং এ সংক্রান্তে যথাযথ কাগজপত্র দেয় তাহলে তদন্তপূর্বক ইজারা বাতিল করা হবে।
পাঠকের মতামত: